ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে সার উৎপাদন ব্যাহত কৃষি খাতে ক্ষতির আশঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৯:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩
  • ৭০ বার

দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোতে সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মূলত গ্যাস সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি সার কারখানার মধ্যে দুটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে তিন লাখ টন সার কম উৎপাদন হবে। ফলে যথাসময়ে কৃষকের সার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর সারের ঘাটতি পূরণে সরকারকে অতিরিক্ত প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে সরকারিভাবে বিসিআইসি আওতাধীন চারটি সার কারখানা রয়েছে। সেগুলো হলো- আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে ওসব কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চারটি সার কারখানারই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় এএফসিসিএল ও সিইউএফএলের কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। যদিও যান্ত্রিক ত্রুিিটর কারণে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে টানা দুই মাস বন্ধ ছিল এসএফসিএলের উৎপাদন। গ্যাস টারবাইনে গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাটি ফের মার্চে উৎপাদনে আসে। কিন্তু এখন উৎপাদনে গেলেও কারখানাটি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাঁচ্ছে না। এর আগে গত বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস বন্ধ ছিল যমুনা সার কারখানা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আগাম কিছু না জানিয়েই ওই সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া উৎপাদন। তবে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে আবারো গ্যাস সরবরাহ তিতাস শুরু করলেও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে মিলছে না। সরকারখানাগুলোর পক্ষ থেকে বারবার পেট্রোবাংলাকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। সার কারখানার জন্য গ্যাস বরাদ্দ রয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএলসি)। এর চেয়ে বেশি গ্যাস পেট্রোবাংলার পক্ষে দেয়া সম্ভব না হলেও এখন সেটাও দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছর ইউরিয়া সার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে। সূত্র জানায়, দেশে সার উৎপাদনে আগে টনপ্রতি খরচ পড়তো ১৭ হাজার টাকা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ওই খরচ কিছুটা বেড়েছে। আর আমদানীকৃত প্রতি টন সারের জন্য ব্যয় করতে হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। দেশে উৎপাদন থেকে আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় এবার চাহিদা অনুযায়ী সার আনতে সরকারকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি খরচ করতে হবে। আর ডলার সংকটের মধ্যে এ অর্থের জোগান নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশের চারটি কারখানায় ১০ লাখ টন সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্থবছরের ১১ মাস শেষ হয়ে গেলেও সার উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৩ টন। কারখানাগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব না হলে বছর শেষে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৭ টন সারের ঘাটতি থাকবে। সেক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে হবে। সরকার রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে (জিটুজি প্রক্রিয়ায়) সার আমদানি করে। এতে চাইলেও সংকটকালীন সার আমদানির কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সরকারি সার কারখানাগুলোর পক্ষে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আর কৃষি খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সূত্র আরো জানায়, আশুগঞ্জ সার কারখানার একটি বয়লার ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কিছুদিন আগে মেরামত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না করায় বয়লারটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। একইভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাঁচ মাস ধরে উৎপাদনে যেতে পারছে না সিইউএফএল। গত বছর কারখানাটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সেটিরও কার্যকারিতা যাচাই করা যায়নি। ফলে উৎপাদনেও যেতে পারেনি কারখানাটি। এ প্রসঙ্গে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, বেশকিছু দিন ধরে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ডকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পেট্রোবাংলার কাছেও বারবার চিঠি দিয়ে কোনো সাড়া মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে কারখানার যন্ত্রাংশ একসময় অচল হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশে সার উৎপাদন ব্যাহত কৃষি খাতে ক্ষতির আশঙ্কা

আপডেট টাইম : ১১:০৯:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩

দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোতে সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মূলত গ্যাস সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি সার কারখানার মধ্যে দুটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে তিন লাখ টন সার কম উৎপাদন হবে। ফলে যথাসময়ে কৃষকের সার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর সারের ঘাটতি পূরণে সরকারকে অতিরিক্ত প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে সরকারিভাবে বিসিআইসি আওতাধীন চারটি সার কারখানা রয়েছে। সেগুলো হলো- আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে ওসব কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চারটি সার কারখানারই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় এএফসিসিএল ও সিইউএফএলের কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। যদিও যান্ত্রিক ত্রুিিটর কারণে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে টানা দুই মাস বন্ধ ছিল এসএফসিএলের উৎপাদন। গ্যাস টারবাইনে গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাটি ফের মার্চে উৎপাদনে আসে। কিন্তু এখন উৎপাদনে গেলেও কারখানাটি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাঁচ্ছে না। এর আগে গত বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস বন্ধ ছিল যমুনা সার কারখানা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আগাম কিছু না জানিয়েই ওই সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া উৎপাদন। তবে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে আবারো গ্যাস সরবরাহ তিতাস শুরু করলেও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে মিলছে না। সরকারখানাগুলোর পক্ষ থেকে বারবার পেট্রোবাংলাকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। সার কারখানার জন্য গ্যাস বরাদ্দ রয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএলসি)। এর চেয়ে বেশি গ্যাস পেট্রোবাংলার পক্ষে দেয়া সম্ভব না হলেও এখন সেটাও দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছর ইউরিয়া সার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে। সূত্র জানায়, দেশে সার উৎপাদনে আগে টনপ্রতি খরচ পড়তো ১৭ হাজার টাকা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ওই খরচ কিছুটা বেড়েছে। আর আমদানীকৃত প্রতি টন সারের জন্য ব্যয় করতে হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। দেশে উৎপাদন থেকে আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় এবার চাহিদা অনুযায়ী সার আনতে সরকারকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি খরচ করতে হবে। আর ডলার সংকটের মধ্যে এ অর্থের জোগান নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশের চারটি কারখানায় ১০ লাখ টন সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্থবছরের ১১ মাস শেষ হয়ে গেলেও সার উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৩ টন। কারখানাগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব না হলে বছর শেষে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৭ টন সারের ঘাটতি থাকবে। সেক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে হবে। সরকার রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে (জিটুজি প্রক্রিয়ায়) সার আমদানি করে। এতে চাইলেও সংকটকালীন সার আমদানির কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সরকারি সার কারখানাগুলোর পক্ষে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আর কৃষি খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সূত্র আরো জানায়, আশুগঞ্জ সার কারখানার একটি বয়লার ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কিছুদিন আগে মেরামত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না করায় বয়লারটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। একইভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাঁচ মাস ধরে উৎপাদনে যেতে পারছে না সিইউএফএল। গত বছর কারখানাটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সেটিরও কার্যকারিতা যাচাই করা যায়নি। ফলে উৎপাদনেও যেতে পারেনি কারখানাটি। এ প্রসঙ্গে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, বেশকিছু দিন ধরে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ডকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পেট্রোবাংলার কাছেও বারবার চিঠি দিয়ে কোনো সাড়া মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে কারখানার যন্ত্রাংশ একসময় অচল হয়ে যাবে।